“অজ্ঞাতনামা” ছিলো তৌকির আহমেদের আরেকটি উপহার

আজ অনেক দিন পর একটি বাংলা মুভি দেখলাম,আর নিজের প্রতি নিজের রাগ হচ্ছে কেনো নিয়মিত বাংলা মুভি দেখি না। আরো বেশী কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে #অজ্ঞাতনামা নামের এই অসম্ভব সুন্দর মুভিটি আমি এত পরে দেখলাম! মুভিটা দেখার পর থেকে শুধু ভেবেই যাচ্ছি কি দেখলাম এটা। আর “ফজলুর রহমান বাবু’ সে তো এক ভালোবাসার নাম♥এই মুভিতে তার অসাধারণ অভিনয় দেখে কান্না করে নাই এমন কেউ আছে বলে আমার মনে হয় না।

শুধু ফজলুর রহমান বাবু একা নন, মোশারফ করিম, আবুল হায়াত, শহিদুজ্জামান সেলিম, নিপূণ একেক জন গুনী শিল্পী তাদের অভিনয় দিয়ে মুভিটি এত সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন তা না দেখলে বোঝা যাবে না। মুভির প্রত্যেকটি চরিত্র বলতে গেলে সবাই যে যার যায়গা তে পারফেক্ট। আর তৌকির আহমেদ এর দারুচিনি দ্বীপ দেখে নাই আমার মনে হয় এই গ্রুপে তেমন কেউ নাই। অজ্ঞাতনামা ছিলো তৌকির আহমেদের আরেকটি উপহার।

অজ্ঞাতনামা ২০১৬

  • Genre : Drama
  • IMDB: 9/10
  • Personal Rating : ❤/10
  • Director : তৌকির আহমেদ
  • Run Time: 1 hours 48 minutes

মুভির শুরুতে শহিদুজ্জামান সেলিম (রমজান আলী)যিনি পেশায় একজন আদম ব্যবসায়ী। তিনি অল্প টাকায় গলাকাটা পাসপোর্ট দিয়ে গ্রামের লোকজন দের বিদেশ পাঠায়।ঠিক তেমনি গলাকাটা পাসপোর্ট নিয়ে মিডেলইস্ট এ পাড়ি জমায় কেফায়েত উদ্দিন প্রামাণিক(ফজলুর রহমান বাবু) এর ছেলে আছির উদ্দিন প্রামাণিক। এক দূর্ঘটনায় আছির উদ্দিন প্রামাণিক মৃত্যুবরণ করে।আর সেখান থেকেই শুরু হয় কাহিনী।

ঘটনা জানাজানি হবার পর পুলিশ, গ্রামের চেয়ারম্যান, এবং গ্রামবাসী মিলে লাশ আনার ব্যাবস্থা করতে থাকে।অসহায় কেফায়েত উদ্দিন প্রামাণিক তার বসত ভিটা বন্ধক রেখে লাশ আনার টাকা জোগাড় করতে চায়।।এছাড়া দালাল রমজান আলী টাকা দিয়ে সাহায্য করে এবং লাশ আনতে তাদের সাথে যায়।

এরপর লাশ বাড়ি এনে গোসল করাতে নিয়ে গেলে দেখা যায় তা কেফায়েত উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলের লাশ না। তাহলে কোথায় চলে গেলো কেয়াফেত উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে। এরপর পুলিশের কাছে লাশ নিয়ে গেলে পুলিশ ঢাকা পাঠায় এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে বলে। পুলিশের কথা মত তারা লাশ নিয়ে ঢাকা যায়, কিন্তু এর কোন সুরাহা করতে পারে না।

তবে কোথায় চলে গেলো কেফায়েত উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে? এই লাশ নিয়ে তারা এবার কি করবে! এর শেষ কোথায় জানতে হলে যারা এখনো অসম্ভব সুন্দর এই মুভিটি দেখেন নাই তারা এখনি দেখে ফেলুন। আর হ্যা আপনি মুভিটি ইউ টিউবে পেয়ে যাবেন।

আসলেই এ যেন এক জীবন্ত সিনেমা

এই মুভিটিকে মাস্টারপিস বললে হয়ত ভুল হবে না। সিনেমার সকল চরিত্র বলতে গেলে একদম বাস্তব। জ্বি,মুভিটি দেখলে এমনটাই মনে হবে।
মুভিটি আমি অনেকবারই দেখেছি।এক কথায় বলতে গেলে ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট বাংলা ফিল্ম।

আমাদের দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ কাজের সন্ধানে অন্য দেশে গিয়ে থাকে।এ সুযোগে অনেক দালাল অবৈধভাবে পাসপোর্ট দিয়ে তাদের সেখানে পাঠিয়ে দেয়।তখন তারা হয়ে যায় নিজের নাম পরিচয়হীন ভিন্ন এক ব্যক্তি। ঠিক এমনিই এক কাহিনী নিয়ে বানানো হয় এই মাস্টারপিস সিনেমাটি।স্পয়লার এলার্ট

রমজান আলী একজন আদম ব্যবসায়ী। যাকে বলা হয় দালাল।তিনি গ্রামের দরিদ্র লোকেদের কাছে গলাকাটা পাসপোর্ট বিক্রি করে এবং সেই পাসপোর্টের মাধ্যমে তাদের বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়।

ঠিক এমনি এক পাসপোর্টের মাধ্যমে বিদেশে যায় কিফায়ত উদ্দিন এর ছেলে আসির উদ্দিন নামক একব্যক্তি।কিন্তু এক দুর্ঘটনায় তিনি সহ ৬ জন মারা যায়।তারপর থেকে শুরু হয় আসল কাহিনি।
এই মুভির প্রায় সকল চরিত্রের অভিনয় ছিলো অনেক ভালো বিশেষ করে আমাদের ফজলুর রহমান বাবু স্যার এর অভিনয় ছিলো সম্পূর্ণ বাস্তব। ওনার এক্সপ্রেশন গুলো বলার বাহিরে।মুভিটি আমাদের বাস্তব জগতের সাথে অনেকাংশেই মিল রয়েছে।

অবশেষে আমি সবাইকে এই মুভিটি দেখতে সাজেস্ট করব।মুভিতে এমন কিছু নেই যেটা দেখে আপনার খারাপ বা বাজে লাগবে।যারা এখনও মুভিটি দেখেন নি তারা চাইলে দেখে নিতে পারেন। ইউটিউবে আছে।

প্রথমেই ধন্যবাদ দিতে হয় তৌকির আহমেদ কে

যিনি এতো সুন্দর একটি মুভি আমাদের উপহার দিয়েছেন।হলিউড বলিউড এর সাথে তুলনা করবো না তবে আমাদের ইন্ড্রাস্টিতে ভালো মুভি হয় তার আরো একবার প্রমান এই অজ্ঞাতনামা।

প্লটঃ প্রথমেই শুরু করতে চাই মুভির একটি ডায়ালগ দিয়ে ” মইরে গেলে আবার বাঁচে কিরাম করে? মরে গেসে মাইনে নেন ” এই ডায়ালগ টি ছিলো কালুখালী থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তার।
মুভিতে আমাদের সমাজের নিমম বাস্তবতা ফুটে ওঠেছে। আমাদের সমাজে দেখা যায় অনেকে অধিক আয়ের আশায়, অথবা পরিবার কে সুখে রাখার আশায় দালাল এর মাধ্যমে বিদেশে যায়। মুভিতেও সেইরকম একটি কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে।দালালের মাধ্যমে বিদেশে গিয়ে যে রকম ভোগান্তি পোহাতে হয় তার আরো একটি প্রমন এই অজ্ঞাতনামা। কিন্তু ভোগান্তি যদি এই হয় যে আপনি আপনার মৃত ছেলের লাশ ই আনতে পারবেন না, নিজ হাতে দাফন কাফন করতে পারবেন না তাহলে ভেবে দেখুন কি দুভাগ্য!!

মুভিতে দেখানো হয়েছে সন্তানের প্রতি বাবার স্নেহ ভালোবাসা, একজন বাবার সন্তান হারানোর বেদনা। সন্তান হারিয়ে একটি পরিবার যে কিরূপ ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে কতটা অসহায় হয়ে পড়ে।
যদি অভিনয়ের কথা বলতে হয়ে তবে বলতে হবে ফজলুর রহমান বাবু আমাদের দেশের অন্যতম সেরা অভিনেতা। পুরোটা সময় স্ক্রিনে ডমিনেট করে গেসেন তার অভিনয় দিয়ে।শতাব্দী ওয়াদুত এর মতো একজন ভারসেটাইল এক্টর এর সাথে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করা তা শুধু মোশাররফ করিম এর দারাই সম্ভব।

তবে মুভিতে বেস্ট পারফর্মার এর নাম বলতে হলে বলতে হবে শহীদুজ্জামান সেলিম এর কথা পুরো মুভিতে একটি নেগেটিভ রোলে অভিনয় করে সবার মন জয় করে নিয়েছেন।পুরোটা সময় তিনি একাই কাপিয়েছেন।এই মুভিতে সবাই নিজেদের সেরা টা দিয়েছেন।

কেনো দেখবেন এই মুভি?

  1. আমাদের ইন্ড্রাস্ট্রি তে যে ভালো মুভি হয় তার আরেকটা প্রমান পাবেন
  2. সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসার জ্বলন্ত উদাহরণ দেখতে পারবেন।
  3. পরিবারের মানুষের একে অপরের প্রতি ভালোবাসা।
  4. প্রবাসী বাংলাদেশি দের কষ্ট, বেদনা নিজ চোখে দেখতে পারবেন।

বাংলা সিনেমার অন্যতম সফল বছর ২০১৬। আয়নাবাজি, অজ্ঞাতনামার মত ছবি মুক্তি পায় এই বছর। আজ “অজ্ঞাতনামা” নিয়ে আমার মতামত শেয়ার করব। ছবির গল্প মূলত মধ্যেপ্রাচ্যে অবৈধ উপায়ে জনশক্তি রপ্তানি ও তার করুণ পরিণতির উপর রচিত। ২০১৬ এর প্রেক্ষাপটে বিষয়টি সময়োপযোগী ছিল।

আমার মতে, তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ছবিগুলোর মধ্যে “জয়যাত্রা” (২০০৪) এর পর ২য় সেরা ছবি অজ্ঞাতনামা। মুভির স্টোরিটেলিং সাদামাটা মনে হলেও মেকিং দুর্দান্ত। গ্রামীণ পটভূমিতে এমন হৃদয়স্পর্শী গল্প বলে নির্মাতা তার জাত চিনিয়েছেন।

ছবির পুরো গল্প একটা লাশকে ঘিরে। কেউ কেউ বলে ছবির নায়ক এই লাশটি। আবার অনেকের মতে ফজলুর রহমান বাবু। কিন্তু ছবির আসল নায়ক এই ছবির গল্প আর শিল্পীদের অনন্য অভিনয়।
অভিনয়ের ব্যাপারে বললে যে যার জায়গায় দুর্দান্ত। ফজলুর রহমান বাবু তার জীবনের অন্যতম সেরা অভিনয় করেছেন এই ছবিতে। কিছু সিকোয়েন্সে তার এক্সপ্রেশন আর ডায়লগ আবেগ ছুয়ে যায়।

“রমজান দালাল” চরিত্রে শহিদুজ্জামান সেলিম অসাধারণ। পুলিশের ওসির চরিত্রে শতাব্দী ভাল করেছেন। মোশাররফ করিমের কমেডি ও সিরিয়াসনেসের যুগলবন্দী ভাল ছিল। যদিও ছবিতে তার চরিত্র তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ। অনান্য চরিত্রে সবাই সেরাটাই দিয়েছেন।

নেগেটিভ ক্যারেক্টারে শহীদুজ্জামান সেলিম যে দুর্ধর্ষ তার “চোরাবালি” (২০১২) আর “অজ্ঞাতনামা” (২০১৬) ছবিতে অভিনয় তা প্রমাণ করে। এই দুই ছবির জন্য তিনি এই ক্যাটাগরিতে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন।

বাংলাদেশেও যে ভালো মুভি তৈরি হয় এই মুভিটি তার একটি উদাহরণ

এই মুভিটিকে লিজেন্ডারি মুভি বললেও ভুল হবেনা৷ সম্প্রতি অজ্ঞাতনামা মুভিটি দেখলাম। মুভিটি আমার কাছে কেমন লেগেছে তা আমি শেয়ার করার চেষ্টা করবো।

মুভিতে দেখানো হয়েছে সন্তান হারালে একটি পরিবার কতটা মুষরে যেতে পারে। সন্তান হারিয়ে বাবা-মার বুক ফাটা কান্না। বাবার চোখের সামনে যদি নিজ পুত্র বিদেশের মাটিতে মূত্যুবরণ করে তাহলে তিনি কতটা অসহায় হয়ে যান তা এই মুভিতে দেখানো হয়েছে। স্ত্রী যখন দেখতে পায় তার স্বামী আর পৃথিবীতে নেই তখন তার কী অবস্হা হয়!

তারপর যে ব্যাপারটা আমার কাছে ভালো লেগেছে, সেটা হচ্ছে সবার সম্মলিত অভিনয়। সবাই এমনভাবে অভিনয় করেছে যেন মনে হয় ঘটনাগুলো তাঁদের জীবনেই ঘটছে৷ কারো অভিনয়ে কোনো দূর্বলতা চোখে পড়েনি৷ ফজলুর রহমান বাবু যে কত বড় লিজেন্ডারি অভিনেতা তা আর নতুন করে বলে দিতে হয় না। তিনি এই মুভিতেও খুব ভালো অভিনয় করেছে৷

তারপর যার অভিনয় আমার ভালো লেগেছে তিনি হচ্ছেন শহীদুজ্জামানা সেলিম। তিনি মুভিতে দালালের ভূমিকায় থাকেন৷ তাঁর অভিনয় আমার কাছে একদম খাপেখাপ মনে হয়েছে। তাছাড়া মোশারফ করিম, আবুল হায়াত, নিপুন, শতাব্দী ওয়াদুদ তাঁদের অভিনয়েও যে ভালো হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

এত সুন্দর মুভিটির জন্য অবশ্যই পরিচালককে প্রশংসা করতে হয়৷ এই মুভির পরিচালক ছিলেন তৌকির আহমেদ। তিনি যেভাবে গ্রামীন পটভূমিতে একটি পরিবারের দুঃখ-বেদনা, অসহায়ত্ব তুলে ধরেছেন তা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছে৷ তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, গ্রাম-বাংলার পটভূমিতে সাদামাটা কাহিনিও কত চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা যায়!

এই মুভিটি দেখার জন্য আপনাকে আমি হাইলি রিকমেন্ড করছি৷ আপনি হয়তো হলিউড, বলিউড,সাউথ ইন্ডিয়ান, কোরিয়ান মুভির ডাই-হার্ড ফ্যান হতে পারেন। তবুও আপনার এই মুভিটি দেখা উচিৎ। বাংলার গ্রামীন পটভূমিতে গোটাকয়েক লিজেন্ডারি মুভির মধ্যে এই মুভিটি অন্যতম। তাই এখনো না দেখে থাকলে মিস দিবেননা যেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *