সর্বকালের সেরা “ইন্টারস্টেলার” সিনেমা রিভিউঃ পর্ব – ২

নাসা বেসে কুপার কে বোঝায় তারা চতুর্থ মাত্রা (ডাইমেনশন) নিয়ে কাজ করছে যা হচ্ছে গ্র‍্যাভিটি। কিন্তু পৃথিবী যেভাবে বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে তাতে করে পৃথিবীতে এর বাস্তবায়ন সম্ভব না। মুভিতে দেখিয়েছে অভিকর্ষজ ত্বরন যদি মানুষ সলভ করে ফেলতে পারে তাহলে একটা গ্রহের পুরো ভূপৃষ্ঠ জুড়ে মানুষ থাকতে পারবে। রাস্তা বাড়ি গাড়ি শুধু সমান ভাবে থাকতে হবেনা, তা হতে পারে গোলাকৃতির, এভাবেই কুপার কে বোঝালো নাসা বেসে।

এবং সেখানের জন ব্রান্ড তাকে আরো জানায় ১০ বছর আগে ১২ জন স্বেচ্ছাসেবন বিজ্ঞানী ১২ টি আলাদা শিপে করে ওয়ার্মহোল এ যাত্রা করে ১২ টি গ্রহ খোজার সুইসাইড মিশনে যায়। কিন্তু তাদের মধ্যে শুধু ৩ টি গ্রহ থেকে তারা সিগনাল পাঠায় যে ৩ টি গ্রহ প্রানী বসবাসের জন্য যোগ্য। সেই ৩ জন বিজ্ঞানী হলেন মিলার,ম্যান,এডমন্ড। কিন্তু এই মুহুর্তে যাত্রা করার জন্য তাদের কুপারের মত দক্ষ পাইলট লাগবে এবং শুধু মাত্র কুপার রাজী হলেই তাদের রকেট ছেড়ে যাবে। তারা কুপার এর উত্তর এর অপেক্ষা করছে

এই রেস্কিউ মিশন এর ২ টি প্ল্যান ছিলো। প্ল্যান A হলো তারা এমন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ স্পেস স্ট্যাশন বানাবে,যেখানে তারা পৃথিবীর প্রায় সব মানুষ নিয়ে যাবে,কিন্তু এই প্ল্যান A সম্পুর্ন করতে তাদের গ্র‍্যাভিটি এর ইকুয়েশন সলভ করতে হবে যা ইতিমধ্যে ড. ব্রান্ড বলেছেন তিনি এগিয়ে গেছেন অনেকটা। আর প্ল্যান B হচ্ছে ওই ৩ টি গ্রহের মধ্যে মানব বসতি স্থাপন করতে হবে,এতে করে তারা যাত্রা করার সময় হিমায়িত কিছু ভ্রুন সংগে করে নিয়ে যাবে। কুপার কে ড. ব্রান্ড নিশ্চিত করলো তোমার সন্তান দের প্রজন্মের জন্য এই পৃথিবীতে আর কিছু নেই..

আবার মহাকাশে ফিরে যাওয়া

কুপার মহাকাশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো,মার্ফ প্রচন্ড রকম আপসেট। সে চাচ্ছেনা তার বাবা তাকে ছেড়ে যাক। মার্ফ দরজা বন্ধ করে বসে আছে তার রুমে। একা একা। হঠাত সে আবার লক্ষ্য করলো তার বুকশেলফ এর বইগুলো আবার সুবিন্যস্ত ভাবে একটা একটা করে পরে যাচ্ছে, এবার মার্ফ বই থেকে মোর্সকোড বের করা শুরু করলো, ঠিক যেভাবে তার বাবা বালুরেখা থেকে মোর্সকোড বের করেছিলো।

মোর্সকোড দিয়ে মার্ফ খাতায় লিখলো, উত্তর আসলো : STAY. মার্ফ চিতকার করে কুপার কে বলতে লাগলো, মার্ফ এর রুমের ভুত টা তাকে সতর্ক করছে যেনো কুপার না যায়। কুপার শুনলো না, সে মার্ফ কে একটা ঘড়ি দিলো। দিয়ে বলল, মার্ফ তোমার বয়স এখন ১০ বছর, আমার ৩৩. আমি শুনেছি অনেক গ্রহে নাকি সময় পৃথিবীর চেয়ে অনেক দ্রুত যায়,আচ্ছা এমন ও তো হতে পারে, যখন আমি ফিরে আসবো তখন তোমার আর আমার বয়স সমান থাকবে?

মার্ফ চুপ করে রইল। সে মানতে চায়না। তার বাবা চলে যাচ্ছে আর কোনো দিন আসবে কিনা সে জানেনা.. আর কে বা কারা থাকে বুকশেলফ এর মাধ্যমে মোর্সকোড পাঠাচ্ছে? মার্ফ জানেনা। মার্ফ কিচ্ছু জানেনা। যাওয়ার আগে এমিলিয়া ব্রান্ড যে কুপার এর মহাকাশ যাত্রায় সংগি হচ্ছে সে মার্ফ একটি টেপ রেকর্ড করার ক্যাসেট দিয়ে যায়, যার মাধ্যমে পৃথিবী থেকে মহাকাশে তারা যোগাযোগ করতে পারবে। টম টেপ টি নিয়ে যায়। মার্ফ কে কোথাও দেখা যায়না। চলে যায় কুপার।

২ বছর তারা ক্রায়োস্লিপ এ থাকার পর ঘুম থেকে ওঠে মেসেজ গুলো চেক করে, সে দেখে টম কথা বলছে,কিন্তু মার্ফ কে সে দেখতে পায়না.. তারা তাদের প্রথম মিশনে যায়, মিলারস প্লেনেট এ। যেখানে নামার সময় এমিলিয়া ফিল করে কোনো একটি হাত যেনো তাকে স্পর্শ করে গেলো। মিলারস প্লেনেট এর ১ ঘন্টা পৃথিবীর হিসাবে ৭ বছর। মিলারস প্লেনেটের গ্র‍্যাভিটি অতিমাত্রায় বেশী হয়ায় সময় খুব আস্তে ভ্রমন করে, কিন্তু এখানে ১ ঘন্টা যেতে যেতে পৃথিবীতে ৭ বছর অতিক্রান্ত হয়ে যায়।

দুর্ঘটনা বসত তারা মিলারস প্লেনেট এ ৩.২৪ ঘন্টা প্রায় পার করে ফেলে। শিপে ফিরে এসে তারা দেখে ২৩ বছর পার হয়ে গেছে.. সবাই হতভম্ব।

পৃথিবীতে এখন ২০৯০ সাল???? ভাবা যায়না

কুপার দ্রুত এসে ভিডিও মেসেজ অন করে,সে দেখে টম বিয়ে করেছে, তার ছোট বাচ্চা হয়েছে, তার ফাদার ইন ল মারা গেছে.. কত পরিবর্তন!!! সে মেসেজ বক্স টি বন্ধ করতে নেয়,তখন ই সে দেখে মার্ফ কে.. মার্ফ…!! সে তরুনী!!

মার্ফ এর জন্মদিন আজকে,সে তার বাবাকে বলছে, বাবা আমার বয়স আজকে ৩৩। তোমার মনে আছে তুমি বলেছিলে তুমি যেদিন ফিরে আসবে সেদিন হয়তো আমাদের ২ জনের বয়স সমান হবে। তো, আমার মনে হয় আজকে ফিরে আসার জন্য খুব ভালো সময়, তাইনা বাবা???

কুপার শক্ত হয়ে বসে আছে চেয়ারে। তার আর তার মেয়ের বয়স আজকে সমান। কুপার হোমে ফিরে যেতে চায়..শিপে আর যা কিছু আছে তা নিয়েই.. সে চিতকার করতে লাগলো.. সে বলল সময় কি পেছানো যায়না? এই ২৩ বছর হারিয়ে ফেলা সময় কি ফিরে পাওয়া যায়না?

এমিলিয়া ব্র‍্যান্ড তাকে বাধা দেয়। ফিরে গেলে চলবে না.. সময় বাকানো যায়, স্কুইজ করা যায়,সময় এর পাশ কেটে তার ফলাফল পরিবর্তন করা যায়,কিন্তু সময় পেছানো যাবেনা। বাকি প্ল্যানেট ২ টা আমাদের খোজ করতে হবে, প্রানের খোজ করতে হবে আমাদের.. এদিকে পৃথিবীতে ড. ব্রান্ড চতুর্থ মাত্রার সমীকরণ সমাধান এর চেষ্টা করছে,তাকে সাহায্য করছে মার্ফ। কিছুতেই তারা সমাধান করতে পারছেনা। কুপার রওনা হচ্ছে দ্বিতীয় গ্রহের উদ্দেশ্যে। ম্যান’স প্লেনেট, এই গ্রহ থেকেও সিগনাল এসেছে। এখানে প্রানের চিহ্ন আছে। প্রান খুজতে হবে।

এই মুভিটি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে কয়েকশ পোস্ট করতে হবে

এত কিছু ঘটেছে এই ২ ঘন্টা ৪৯ মিনিটে। এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয় নি মুভিটি এত বিশাল দৈর্ঘ্যের। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেন নিঃশ্বাস ফেলার উপক্রম নেই। রেস্পেক্ট টু ক্রিস্টোফার নোলান। এডিটিং এ লি স্মিথ এর আর কি বা করার ছিল? আমি এই মুভির ৪ ঘন্টার ভার্শন দেখতেও রাজি আছি।

মুভির প্লটের জন্য জোনাথন নোলান ক্যালটেকে রিলেটিভিটি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। স্ক্রিপ্ট রাইটিং এর সময় সাথে রাখা হয়েছিলো তাত্ত্বিক পদার্থবিদ কিপ থর্নকে। থর্ন হচ্ছে একদম প্রথম দিকের বিজ্ঞানীদের একজন যিনি থিওরেটিক্যাল সায়েন্টিফিক রিসার্চ করেছিলেন, যে বিজ্ঞান কি আসলেই আমাদেরকে টাইম ট্র্যাভেল এর সূত্র দিতে পারবে কিনা; ব্ল্যাক হোল কসমোলজি নিয়ে তার নিজস্ব রিসার্চ আছে।

মুভির গল্প ছিল অসাধারণ। বর্তমান সময়ে এত ইউনিক, এম্বিশাস গল্পের দেখা মিলে না। নোলান তার নামের সাথে আরো একটি মডার্ন এপিক যুক্ত করলেন। গল্পের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল এটিকে পর্দায় রুপ দেয়া। যেটি মনে হয় না আরও নিখুঁত করা সম্ভব ছিল। বলছিনা গল্পটি ফ্ললেস ছিল। কিন্তু ওয়াও, এটি একটি জার্নি ছিল। কিছু প্রশ্নের হয়ত উত্তর পাওয়া যায়নি, কিছু জিনিস হয়ত পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা পায় নি। এ সব কিছুই মেনে নেয়া যায় কারণ তিনি নতুন কিছু করেছেন।

মুভিটির মেকিং ছিল স্পেক্টেকুলার। এখানে নোলান সাহেব কোন ফাঁক ফোকর রাখেন নি। ওয়ার্ম-হোল, ব্ল্যাকহোল, স্পেস-টাইম রিপ্রেজেন্টেশন ভিজুয়ালি যেমন ছিল অসাধারণ তেমনি ছিল নির্ভুল। সি জি আই এর ব্যাবহার ছিল মিনিমাম যার কারণে দর্শক বাস্তবিক অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হবেন না। স্পেসের শটগুলো ছিল আনম্যাচড। সত্যিকার অর্থে আমি চিন্তা করছি নোলান পরবর্তী প্রজেক্টগুলোকে আর কোন উচ্চতায় নিয়ে যাবে! পূর্বের পর্বঃ এখানে

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *