একদিন এক দৈত্য এসে বলে সে আগের জন্মে রাজকন্যা ছিল অদ্ভুত এক মুভি

হঠাৎ যদি আপনি জানতে পারেন আপনি আগের জন্মে এক বিশাল রাজ্যের রাজকন্যা ছিলেন এবং সেই রাজ্য ফিরে পেতে আপনাকে ৩টা অদ্ভুত কাজ করতে হবে। আপনি করবেন? ইন্টারেস্টিং প্লট তাই না। অফেলিয়া নামক ১১ বছরের এক মেয়ের কাছে হঠাৎ একদিন এক দৈত্য এসে বলে সে আগের জন্মে রাজকন্যা ছিল এবং সেই রাজ্য ফিরে পেতে তাকে অদ্ভুত ৩টি কাজ করতে হবে। অফেলিয়া সেই ৩টি কাজ করতে রাজি হয়ে যায়।

কি ছিল সেই কাজ গুলো? কতটা অদ্ভুত ছিল সেই কাজ গুলো? কাজ গুলো ঠিকঠাক মতো করে অফেলিয়া কি তার রাজ্য ফিরে পেয়েছিল? নাকি কোন ভুল করে বসেছিল? আসলেই অফেলিয়া আগের জন্মে রাজকন্যা ছিল? জানতে হলে দেখতে হবে ২০০৬ সালের মাস্টারপিস স্প্যানিশ মুভি ” Pan’s Labyrinth ”

  • Movie: ” Pan’s Labyrinth “
  • Director : Guillermo del Toro
  • Cast:Ivana Baquero Etc
  • Country : Spain
  • Genre : War Fantasy

মুভিটিকে আমি এক কথায় মাস্টারপিস বলছি। মুভিতে যুদ্ধের পাশাপাশি ফ্যান্টাসির মাধ্যমে পরিচালক এক অন্য জগতে নিয়ে যায় অডিয়েন্সকে। মুভির গল্পটা জাস্ট পুরোটা সময় বুদ করে রাখে। গল্পের গাথুনি অথবা স্ক্রিপ্ট এতটাই স্ট্রং ছিল যে মুভি দেখার সময় আপনি সেই জঙ্গল,গ্রাম,কাল্পনিক জগতে ডুবে যাবেন।

স্প্যানিশ মুভি ” Pan’s Labyrinth

মুভির গল্প সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না শুধু বলতে চাই, আপনি যেই জনরার ভক্তই হয়ে থাকুন ” Pan’s Labyrinth ” আপনার মনকে ছুয়ে যাবে এবং মুভি শেষে তৃপ্তির সমুদ্রে ভাসাবে। শুধুমাত্র সাউথ ইন্ডিয়ান মসলাদার নায়িকা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি টাইপ মুভি লাভারদের কাছে ফালতু মুভি লাগতে পারে।

Ivana Baquero মেয়েটা যখন এই মুভিতে অভিনয় করেছিল তখন তার ১১ বছর ছিল। আজ তার ২৮ বছর বয়স। সেই ১১ বছর বয়সে জাস্ট চোখ ধাধানো অভিনয় করেছে। ৩টা অস্কার সহ ১০৯ টি এওয়ার্ড জিতেছে মুভিটি। ১১৯ মিনিটের মুভিটি পুরোটা সময় আপনাকে স্ক্রিনে আটকে রাখবে কখনো যুদ্ধ কখনো রহস্য কখনো ফ্যান্টাসি হরর দিয়ে গল্পে ডুবিয়ে রাখবে এবং মুভি শেষে মুগ্ধতা নিয়ে উঠবেন কনফার্ম।

হিন্দি উর্দু উগান্ডা ডাব নেই। ইংরেজি অথবা বাংলা সাবটাইটেল দিয়ে দেখে নিতে পারেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখে নিতে পারেন। অতিরিক্ত ভীতু মানুষ অথবা বাচ্চারা দেখবেন না। শেষে একটা কথাই বলবো, সেরা কিছু দেখতে চাইলে ” Pan’s Labyrinth ” দেখুন।

  • আমার ব্যাক্তিগত রেটিং ৮.৫/১০

Pan’s Labyrinth 2006

ছোট বেলা মানেই রূপকথার রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া একরাশ রাজকুমার রাজকুমারী রাজা রানীর দেশ.যেখানে কোনো কষ্ট নেই দুঃখ নেই শুধুই আনন্দ। যেখানে জাদুর মতো সব বিপদ কে ফু মেরে উড়িয়ে দেয়া যাই যেখানে শুধুই ভালোবাসা আর ভালোবাসা। সেরকমই এক রাজ্যে হারিয়ে যেতে চেয়েছিলো ছোট্ট ওফেলিয়া।

২০০৬ এ মুক্তিপ্রাপ্ত Guillermo del Toro এর পরিচালনায় Pan’s Labyrinth অসাধারন একটা সিনেমা। ১৯৪৪ সাল ,স্পেনে গৃহযুদ্ধ চলছে। ছোট্ট ওফেলিয়া (Ivana Baquero) তার গর্ভবতী মা কে নিয়ে চলে আসে তার সৎ বাবার কাছে থাকতে। তার বাবা একজন অত্যাচারী জেনারেল। সে খুঁজে বেড়াচ্ছে স্প্যানিশ বিদ্রোহীদের। ওফেলিয়া কে সে মোটেই পছন্দ করেন না এবং চায় এক সুস্থ পুত্র সন্তানের। এই পরিবেশ ওফেলিয়ার ভালো লাগে না।

তার একমাত্র অবলম্বন তার মা এবং একমাত্র সঙ্গী তার রূপকথার বইগুলো। এই বইগুলো তার একমাত্র সঙ্গী। একরাতে বাড়ির পাশের এক গোলকধাঁধায় ওফেলিয়া আবিষ্কার করে এক অদ্ভুত আগুন্তুক কে।যার নাম ফৌন। ফৌন ওফেলিয়া কে বলে ১ মাসের মধ্যে ওফেলিয়া কে ৩ তে কাজ করতে হবে। যদি সে তা ঠিক মতো করে তাহলে তার মা আর হবু ভাই সাথে থাকবে এবং ওফেলিয়া এক সুন্দর রাজ্যের রাজকন্যা হবে। ওফেলিয়া র হাতে তুলে দেয় একটা বই।

সেই বই খুলতে তাতে ফুটে ওঠে ৩ তে কাজ এর ছবি। শেষ অব্দি ওফেলিয়া কাজ গুলো করতে পেরেছিলো কিনা সে রাজকন্যা হতে পেরেছিলো কিনা তা জানতে গেলে দেখতে হবে Pan’s Labyrinth. Pan’s Labyrinth একটি অসাধারন চব রূপকথার মধ্যে এক চরম বাস্তব কে তুলে ধরেছেন পরিচালক।একদিকে ওফেলিয়ার রূপকথার জগৎ আর একদিকে বাইরের বাস্তব নিষ্ঠুর জগৎ।

বিদ্রোহীদের বাঁচার চেষ্টা

ওফেলিয়ার নিষ্ঠুর শয়তান জেনারেল বাবা যিনি বিদ্রোহীদের ওপর নিষ্ঠুর অত্যাচার চালাচ্ছেন আর একদিকে বিদ্রোহীদের বাঁচার চেষ্টা। ওফেলিয়ার রূপকথার জগতে ও নিষ্ঠর শয়তানের ছড়াছড়ি। বাস্তব যে কতটা কঠিন সেটাই দেখানো হয়েছে। বাস্তব কে এড়াতেই ছোট্ট ওফেলিয়া রূপকথা কে আঁকড়ে ধরেছে। সিনেমা তে ওফেলিয়া (Ivana Baquero) ও Captain Vidal(Sergi López) এর অভিনয় অসাধারন। সিনেমাতে আর একটি জিনিস দারুন সেটি হলো মেকআপ।

মেকআপ ও স্পেশাল এফেক্টস এর মাধ্যমে রূপকথার চরিত্র গুলো সুন্দর করে দেখানো হয়েছে। বিশেষ করে ফৌন ও ভয়ানক দানব কে অসাধারন লেগেছে। একাডেমী অ্যাওয়ার্ড এ Best Art Direction,Best Cinematography ,Best Makeup এ পুরস্কার জিতে নেন Pan’s Labyrinth.বাস্তব ও রূপকথার এক সুন্দর যুগলবন্দী Pan’s Labyrinth.

জর্জ লুকাস, স্টিভেন স্পিলবার্গ, জেমস ক্যামেরন আর পিটার জ্যাকসনের পর কে হতে পারেন চলচ্চিত্রে বৈচিত্র্য আর প্রযুক্তিগত নতুন মাত্রা যোগ করার মতন পরিচালক? স্টার ওয়ার্স, ইটি, জুরাসিক পার্ক, টার্মিনেটর, এভাটার, লর্ড অফ দ্যা রিংস হল চলচ্চিত্রকে প্রযুক্তিগত আর বৈচিত্র্যগত নতুন দিশাতে নিয়ে যাওয়ার মতন চলচ্চিত্র।

সিটিজেন কেইন, সেভেন সামুরাই, সাইকো, গডফাদার, দ্যা গুড দ্যা ব্যাড এন্ড দ্যা আগলী আর পাল্প ফিকশন গোটা চলচ্চিত্র বিশ্বকে পরিবর্তন করে দিয়েছে চলচ্চিত্রগুলো মুক্তির পর। লায়ন কিং আর টয় স্টোরির অবদানও অসামান্য। তবে আমি এই পোস্টে প্রযুক্তিগত আর বৈচিত্র নিয়ে কাজ করে চলচ্চিত্র জগতকে পরিবর্তন করে দেয়া জর্জ লুকাস, স্টিভেন স্পিলবার্গ, জেমস ক্যামেরন আর পিটার জ্যাকসন, এই চারজনের কথাই বলছি। তাদের উত্তরসূরি কে বা কারা হতে পারেন বলেই ভাবছি।

অসাধারন সব ট্রেন্ড সেটার সিনেমা

লুকাস ফিল্মস, ড্রীম ওয়ার্কস, এম্বলিন এন্টাটেইনমেন্ট, ওয়েটা ডিজিটাল, উয়িংনাট ফিল্মস, লাইটস্টর্ম এন্টাটেইনমেন্ট এর মতন প্রতিষ্ঠানের জনক উনারা। দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। উদ্ভাবন করেছেন অনেক প্রযুক্তি আর শিল্প। একের পর এক অসাধারন সব ট্রেন্ড সেটার সিনেমার জন্ম দিয়েছেন এই চারজন।

অরসন ওয়েলস, আকিরা কুরোশাওয়া, আলফ্রেড হিচকক, ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা, মার্টিন স্করসেসি, উডি এলেন, ক্লিন্ট ইস্টউড, ডেভিড ফিঞ্চার, আলেজান্দ্রো গঞ্জালেজ ইনারিটু, ক্যাথরিন বিগোলো, ক্রিস্টোফার নোলান, কুইন্টিন টরেন্টিনো, ড্যারেন এরোনফস্কী, বা অন্যদের নাম উপরোক্ত নামগুলোর সাথে যোগ করছি না কারন উপরের চারজনের ভিন্যতা, চলচ্চিত্রে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, উদ্ভাবন আর বিষয়বস্তুর ভিন্যতার ডাইমেনশন সব দিক বিচারে অনেকটাই আলাদা।

আর দেখুন

মেট্রিক্সের পর ওয়াচস্কি ভাইদের (এখন বোনেদের!) উপর অনেকটাই আশা জেগেছিলো যা পরবর্তিতে উনারা আর ধরে রাখতে পারেননি।
বলেন তো ভাই ও বোনেরা, আপনাদের মতে কাদেরকে জর্জ লুকাস, স্টিভেন স্পিলবার্গ, জেমস ক্যামেরন আর পিটার জ্যাকসনের যোগ্য উত্তরসূরি বলে মনে হয়?

ফ্যাসিস্ট ফ্র‍্যাংকো আক্রান্ত স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের গর্ভে জন্ম নেয়া এক রুপকথার নাম হচ্ছে Pan’s Labyrinth. রুপকথার মতই অসম্ভব সুন্দর একটা সিনেমা এই স্প্যানিশ মাস্টারপিসটি! ভিজুয়ালি স্টানিং। এমন স্ক্রিপ্ট মাথায় আসে ক্যামনে, ম্যান! টুপি খুলা সালাম!এই মুভিটা দ্যাখার জন্যে শুধু এইটুকু জেনে রাখুন, কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ইতিহাসে এই মুভিটা ২২ মিনিটের স্ট্যান্ডিং অভেশন নিয়ে এখনো পর্যন্ত শীর্ষে! বুঝুন কেন এইটা মাস্ট ওয়াচ। সিনেমার গল্পে যাবো না শুধু বলব মেয়েটার অভিনয় আর অসম্ভব নিষ্পাপ চোখের জন্যে হলেও এই সিনেমা বারবার দ্যাখা যায়।
বাস্তবতা আর রুপকথার অসাধারণ কেমিস্ট্রি দ্যাখতে এই সিনেমাটা আপনার দ্যাখা উচিৎ মুভি লাভার হিসেবে।

রূপকথার প্রীতি

আমার মত অনেকের রূপকথা প্রীতি আছে। কিন্তু কিছু মানুষ এমনো হয় যারা কেবল রূপকথাতে বাঁচে আর রূপকথাতেই মরে। এমন এক মেয়ে নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জাদুর গল্প pan’s labyrinth । যেখানে বাস্তবতা আর কল্পনা মিলে একাকার। যেখানে নিষ্ঠুর-বাস্তবতা থেকে মুক্তি দেয় নিজের তৈরি এক রূপকথার জগৎ। নিজের বৈশিষ্ট্যে মেয়েটির মধ্যে থাকার কারণে হয়ত ভালবাসা তৈরি হয়েছে অফিলিয়া নামের চরিত্রের জন্য।

গল্পের শেষ ছিল মধুর-বেদনায় পূর্ণ যেন কিছু রেশ রেখে গেল নিজের মাঝে। আর আপনি ভাববেন কি এক মায়ায় যেন আচ্ছন্ন ছিলাম রূপকথার সেলুলয়েডের মাঝে। বলা বাহূল্য সবার ভালো লাগবে না। যেটা খুবই স্বাভাবিক। এখানে স্রেফ আমার অনুভূতি আছে; একেক জনের ভালোলাগা একেক রকম তাইতো হাজারো জনারের মুভি ভি সৃষ্টি হয় প্রতি বছর। রূপকথা যদি আপনার প্রিয় জনার হয় তাহলে দেখে ফেলতে পারেন pan’s labyrinth ।

Pan’s labyrinth (2006) , Guillermo del Toro এর করা আরেকটি মাস্টারপিস । ভদ্রলোকের সিনেমার দুনিয়াগুলি পুরোপুরি ভিন্ন । ছোটদের দুনিয়া কিন্তু বড়দের মাল মসলায় ভরপুর । খুন, হত্যা, রহস্য অনেক বেশি বাস্তব অনেক বেশি নিষ্ঠুর . ছোটবেলার ঠাকুরমারঝুলি পড়ার সময় যে ভয়, যে রহস্য যে বুকে দুরদুর করা ওই অনুভুতি হয়েছিল ছবিটি দেখার সময় । Ofelia এর চরিত্র ঘিরে পুরো সিনেমার কাহিনি । Ofelia পাতালপুরীর রাজকন্যা মর্তের পৃথিবীতে বন্ধী ।

তিনটি ভয়ঙ্কর কঠিন পরিক্ষার সম্মুখীন

মা বাবা পাতালপুরীর রাজা রানির কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য তিনটি ভয়ঙ্কর কঠিন পরিক্ষার সম্মুখীন হতে হবে তাকে এই পৃথিবীতে ।Ofelia কি পারবে এই কঠিন পরীক্ষা পার করতে ? পরতে পরতে বাধা, উত্তেজনা, রহস্য, বাচ্চাখেকো দানব ,ফ্যান্টাসি জগতের কিছু ভয়ঙ্কর চরিত্র এবং মানুষরূপী দানব সৎবাবার বাঁধা উপেক্ষা করে তার লক্ষে পৌঁছাতে ?

Ofelia এর চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছে Ivana Baquero ।এই প্রতিটি চরিত্র অনেক বেশি গভীর অনেক বেশি Shaded. Ofelia এর মায়ের পেটে অনাগত ভাইকে মাকে কষ্ট না দেয়ার আকুতি মুহূর্তেই মনে দাগ কেটে যায় । Mercedes চরিত্র এর lullaby বাজতে থাকবে কানে । দুঃখ ও সুখ এর দোটানায় পড়তে হবে দর্শককে ছবির শেষ মুহূর্তে । A must watch for any movie lovers !!!!

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *