বর্তমান যুগের সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর একটি অ্যাবর্শন

বর্তমান যুগের সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর একটি অ্যাবর্শন। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোয় প্রায় প্রতিদিনই ক্লিনিকের বাইরে আন্দোলন করতে থাকে অ্যাবর্শন বিরোধী দলগুলো। আবার অনেকেই মনে করেন যে যার শরীরে সন্তান বেড়ে উঠছে কেবল তারই অধিকার রয়েছে যে সে সন্তানটি রাখতে চায় কি না। কিন্তু যখন ভুলবসত একজন কিশোরী প্রেগন্যান্ট হয়ে যায় তখন তার করনীয় কি?

সে যদি অ্যাবর্শন করার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে তার সামাজিক, মানসিক ও শারীরিক অবস্থা কেমন হয় তাই তুলে ধরা হয়েছে “Never Rarely Sometimes Always” নামক এই মুভিতে। “Never Rarely Sometimes Always” মুভিতে তুলে ধরা হয়েছে Autumn নামের এক কিশোরীর অ্যাবর্শনের যাত্রা। এই একটি সিদ্ধান্ত তাকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যায় তাই যেন মনের ভেতর থেকে অনুভব করাতে চেয়েছে এই মুভিটি।

এই মুভিটি বেশ সাইলেন্ট। এতে নেই কোনো অপ্রয়োজনীয় ডায়ালগ কিংবা সাউন্ড ইফেক্ট। কেমন একটা অস্বস্তি বোধ হয় যা হয়তো মূল চরিত্রের মনোভাবেরই প্রতিচ্ছবি। এই কঠিন যাত্রায় তার পাশে শুধুমাত্র ছিল তার সমবয়সী কাজিন Skylar। সেই সাথে দেখানো হয়েছে যে জীবনের প্রতিটি পদেই মেয়েদের শিকার হতে হয় নানা ধরনের শোষন ও হয়রানির এবং কিশোরী বয়সে অনেকে বুঝেও উঠতে পারে না যে কিভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করা যায় বা কার কাছে সাহায্য চাওয়া যায়।

বর্তমান যুগের সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর একটি অ্যাবর্শন

মুভিতে মূল চরিত্র Autumn এবং Skylar-ই। কিছু পার্শবর্তী চরিত্র রয়েছে তবে তাদের এই মুভিতে তেমন কোন ভূমিকা নেই। Autumn চরিত্রে অভিনয় করেছেন Sidney Flannigan ও Skylar চরিত্রে অভিনয় করেছেন Talia Ryder। দুজন অভিনেত্রীই বেশ সুন্দর ও মার্জিত অভিনয় করেছেন। সবচেয়ে ভালো করে যেই বিষয়টি তারা দুজন ফুটিয়ে তুলেছেন তা হলো তাদের দুজনের অটুট বন্ধুত্ব।

এই পুরো যাত্রায় Skylar যেভাবে তার কাজিনের পাশে ছিলো তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে মুভিটি বেশ স্লো। কিছু ক্ষেত্রে অনেকটাই বোরিং হয়ে যায়। মুভির মূল উদ্দেশ্যটি বা মূল কাহিনীটি আরো কম রানটাইমে দেখানো সম্ভব ছিলো। এই মুভিটি বেশ সিম্পল ও তাই কোনো সারপ্রাইজ বা শকিং রিভিল ছিলো না। বলতে গেলে মনে হয়েছে কারো জীবনের খুবই নির্বাচিত একটি অংশ তুলে ধরা হয়েছে।

এর বাহিরে এই চরিত্র গুলো কেমন বা তাদের বাকি পরিবারের সাথে তাদের সম্পর্ক কেমন এগুলো কিছুই দেখানো হয়নি। মুভির শুরুতে চরিত্র গুলো যেমন অচেনা ছিলো শেষেও তাই। ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট ও ব্যাক স্টোরির অভাব অনুভব করা যায়। একটি সামাজিক মেসেজ ভিত্তক মুভি হিসেবে মুভিটি খারাপ না হলেও আমি কাউকে এটি মাস্ট ওয়াচ বলবো না। আমার মনে হয় তারা এই মুভিটি উপভোগ করবে যারা কিছুটা সফট স্লো ধরনের মুভি পছন্দ করেন। মুভিটি যে কোন Torrent Sites-এ পেয়ে যাবেন সহজেই।

Never Rarely Sometimes Always (2020)
#No_Spoiler_Review
IMDB: 7.4
Personal: 7.5
Genre: Drama

অ্যামেরিকান টিনেজার যখন গর্ভপাত করতে নিয়ইয়র্কে পা বাড়ালো

১৭ বছরের চুপচাপ বিষণ্ণ অ্যামেরিকান টিনেজার যখন গর্ভপাত করতে নিয়ইয়র্কে পা বাড়ালো, ততক্ষণে অনেকেই বাচ্চার বাপ কে এই চিন্তায় অস্থির হয়ে থাকবে। মুভির শুরুতেই তার স্কুলের ছেলেপেলে আর পরিবারের যেই হাল দেখি, সেখানে তাকে ঠিক ওই ধরণের মেয়ে মানা কষ্টকর। তাই গর্ভপাত করাতে গিয়ে পরামর্শদাতা মহিলা যখন প্রক্রিয়াভিত্তিক প্রশ্নগুলো করা শুরু করে, তখন খুব মনোযোগী দর্শক হলে অটামের প্রতিক্রিয়া ও উত্তর দেয়ার ধরণে অনেক কিছু ধরতে পারবেন।

কিন্তু সরাসরি কোথাও কোন এক্সপোজিশান নেই, নেই কোন ফ্লাশব্যাক। আছে সম্পূর্ণ Show dont Tell ভঙ্গি, যেখানে চরিত্রদের কাজের মাধ্যমে তাদের অব্যক্ত কথা পড়ে নিতে হয়। অ্যালাইজা হিট্ম্যানের ৩য় মুভি- Never Rarely Sometimes Always নিঃসন্দেহে ২০২০ এ আমার দেখা এমন একটা মুভি, যার জন্য পরিচালক আর অটাম চরিত্রে নবাগতা সিডনি ফ্ল্যানিগানের নীরব অভিব্যক্তিহীন অভিনয় অস্কারে মনোনয়ন দাবী করে।

কিন্তু হয়তো শেষমেশ A24 এর ২০১৯ এর মুভিগুলোর মতো ইন্ডিপেন্ডেন্ট মুভি হিসেবেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। ২ বছর আগে Leave No Trace এর ম্যাকেঞ্জি ডেভিসকে যেভাবে উপেক্ষা করা হয়েছিলো সেভাবেই। কারণ পুরষ্কার পাবে Winter’s Bone এর ওইধরণের হার্ডহিটিং চরিত্র যা জেনিফার লরেন্সের ক্যারিয়ার গড়ে দিলো। অথচ মেলোড্রামা দিয়ে আবেগে কান্দায় ফেলানোর মতো সব সুযোগ ছিলো এই সিনেমায়।

মেলোড্রামা দিয়ে আবেগে কান্দায় ফেলানোর মতো সব সুযোগ ছিলো

তা না করে রক্ষণশীল সমাজে বড় হওয়া এই বয়সের মেয়েরা গর্ভপাত করাতে কিরকম ঝক্কির ভেতর দিয়ে যায়, সেটাই এখানে জার্নির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। আশ্চর্য হলেও সত্যি, ঠিক এই বিষয়টা নিয়ে মুভি আমি আর দেখেছি মনে পড়েনা, যেখানে কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচার করা হয়নি। শুধু মেয়েটার মানসিক জার্নি, যেখানে তাকে সঙ্গ দেয় তার কাজিন। ওদের মধ্যকার সম্পর্কেও একইরকম সূক্ষ্মতা, অনেক অজানা কথা, ক্লাইম্যাক্সে যার পে-অফটা অদ্ভুত সুন্দর!

নেই কোন আবেগি আবহ সঙ্গীত, সিনেমাটগ্রয়াফিতে ভাবসাব, পুরোটাই শান্ত নীরব। ক্যামেরা সর্বক্ষণ হয় অটামের ক্লোজআপ না হলে দুজনের বড় শহরে অসহায় উপস্থিতিকে ফ্রেমবন্দী করে যায়। এ যেন পরিচালকের অ্যামেরিকান সিস্টেমের ব্যর্থতার দিকে ছোট একটা প্রতিবাদী কন্ঠ, যেখানে প্রতিনিয়ত এই বয়সী মেয়েরা এই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। যেখানে ক্লিনিকগুলো নিজেদের ডাঁট বজায় রাখতে গর্ভপাত অধিকারের বিরোধিতা করেই যাচ্ছে।

আরোও দেখুন>>>

এখানে এমনভাবে অ্যাজেন্ডাগুলোকে আনা হয়েছে, যাতে কট্টরপন্থীরা প্রোপাগান্ডা বলে চালিয়েও দিতে পারবে না। এখানেই মুভিটা অসাধারণ।
পরপর দুইরাত বছরের এখন পর্যন্ত সেরা ২টা ছবি দেখে ফেললাম। এই ছোট মুভিগুলার কথা বছর শেষের বড় বড় তালিকায় পাবেন না। পেতে হলে বড় বড় ক্রিটিকদের ফলো করতে হবে। রজার এবার্ট পেইজ ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে এটা আবিষ্কার করি আর মেয়েটা সুন্দর দেখে দেখে ফেলি।
প্রকৃত ভালো সিনেমা খুঁজলে রটেন টোম্যাটোজে ৯৯% ফ্রেশ, ৮.৬/১০ রেটিং পাওয়া ছবিটা দেখে ফেলেন। বিশেষ করে যারা কিছুটা হলেও Show dont tell ঢঙ্গের ছবি উপভোগ করেন।
আমার গ্রেডিংঃ A

NEVER RARELY SOMETIMES ALWAYS 2020

কিছু মুভি তৈরিই হয় আপনাকে জীবনের একটি পর্যায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য। হ্যা এখানে কোন এন্টারটেইনমেন্ট এলিমেন্ট পাবেন না, নেই তেমন গম্ভীর বা ক্লাসি ডায়ালগ অথবা বিজিএম। তবে দেখতে পাবেন একটি জীবনের পর্যায়, একটি মানসিক দ্বন্দ্ব যেখানে আর কোন উত্তর নেই। মেটাক্রেটিক এ লিস্টের ১ নম্বরে ছিল তবে অডিয়েন্স তেমন একটা রেসপন্স করে নাই, তবে সব ধরনের রেটিং ই অনেক বেশি।

কলেজে পড়ুয়া মেয়ে ওটাম ১৭ বছরের এক তরুণী যে কিনা গর্ভপাত এর মত সিদ্ধান্ত নেয়। তবে কিভাবে বা এর ব্যাক স্টোরির দিকে ফোকাস না করে তার এ গর্ভপাত করাতে গিয়ে তার জীবনের পর্যায় টিকে তুলে ধরা হয়েছে। সঙ্গী হিসেবে সাথে ছিল তার কাজিন। তার এ জার্নি টাই ছবির পটভূমি। যারা জীবনমুখী ছবি দেখতে চান তারা অবশ্যই দেখবেন তবে এন্টারটেইনমেন্ট খুঁজলে Mortal Kombat দেইখেন।

যারা জীবনমুখী ছবি দেখতে চান তারা অবশ্যই Mortal Kombat দেইখেন।

বাস ছুটে চলেছে পেনসিলভেনিয়ার গ্রাম্য দিগন্তরেখা পেরিয়ে,গন্তব্য নিউইয়র্ক।এ বাসেরই দুজন যাত্রী অটাম আর তার কাজিন স্কাইলার।বাড়িতে কেউ জানেনা তাদের নিউইয়র্ক যাত্রা সম্পর্কে,হাতে অর্থকড়িও সামান্য।দুই বোনের অসময়ে নিউইয়র্ক যাত্রার উদ্দেশ্য হল অটামের গর্ভপাত ঘটানো।মা হওয়ার অনুভূতি হয়ত সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতিগুলোর একটি,কিন্তু ১৭ বছর বয়সী অটামের জন্য তা মোটেও নয়।

এজন্যই গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দ্বিতীয় বার ভাবেনি সে।সিনেমায় কোন আন্টাগনিস্ট নেই,নেই কোন থ্রিলিং এলিমেন্ট।একদম স্রোতহীন নদীর মত।এরপরেও পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার Eliza Hittman সাদামাটা গল্পটা এত সূক্ষ্মভাবে বুনেছেন যে এক মূহুর্তও চোখ সরাবার জো নেই।
অভিনেত্রী Sidney Flanigan(অটাম) আর Talia Ryder(স্কাইলার) দুজনেরই বড় পর্দায় অভিষেক হয়েছে এই সিনেমায়।

সে হিসেবে দুজনের অভিনয়ই বেশ পাকা লেগেছে।Talia “স্কাইলার” চরিত্রের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে সময় পেয়েছিলেন মাত্র ৪৮ ঘন্টা।স্পিলবার্গের আপকামিং West Side Story তে আবার দেখা মিলবে ১৮ বছর বয়সী এই অভিনেত্রীর। পৃথিবীতে প্রতি বছর গড়ে ৫৬ মিলিয়ন গর্ভপাত ঘটানো হয়।

এত বড়সড় সামাজিক সমস্যা নিয়ে সিনেমা বানালেন অথচ পরিচালক কোন মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেননি।অটামের গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নৈতিক ছিল কি না তা বিচারের দায়ভার ছেড়ে দিয়েছেন দর্শকের ঘাড়ে।পুরো সিনেমা জুড়ে একটা বিষন্নতার চাদর আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল।
Never Rarely Sometimes Always ৭০ তম বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে Silver Bear Grand Jury Prize জিতে নেয়।
আমার রেটিংঃ৭.৫/১০

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *