জনমানব শূন্য স্থান থেকে একা বেঁচে ফেরার সংগ্রাম

কাহিনির শুরুতে দেখা যায় স্যাডিস কোরিয়ার কোম্পানির ইমপ্লোয়ার চাক তার কর্ম জীবনে অনেক সিরিয়াস, সে এতোটাই সিরিয়াস যে সে চাই তার তার কোম্পানির প্রত্যকটা পণ্য যেন সময় মতো ডেলিভারি হয়। এবং অন্য দেশের কোরিয়ার ব্রাঞ্চ কোম্পানির ইমপ্লোয়ারদের ও সে মোটিভ করে এবং ডেলিভারি সচল রাখতে সে সচারাচর অন্য দেশে ভ্রমণ করে।

হঠাৎ তার কোম্পানির মালেয়শিয়া ব্র্যাঞ্চে জরুরি একটা কাজ এসে যায় এবং ওখানে যাওয়ার আগে তার প্রেমিকা ক্যালির সাথে দেখা করে এবং চাক ক্রিশমাসে ফিরে আসবে বলে ক্যালি কে আশস্ত্ব করে বলে সে মালেয়শিয়ার উদ্দেশ্যে ফ্লাইটে উঠে, গমণকালীন উড়োজাহাজ মহাসাগরের মাঝপথে এসে এক ভয়ানক ঝড় এর মোকাবেলা হয় এবং উড়োজাহাজ ক্রাশ হয়ে সব যাত্রী মারা যায় এবং সে এক বেঁচে গিয়ে একটা নির্জন দ্বীপে চলে যায়।

নিজস্ব মতামত: এই মুভিতে পিউর ভালোবাসা, জনমানব শূন্য স্থান থেকে একা বেঁচে ফেরার সংগ্রাম ও টম হ্যাঙ্কস এর অভিনয় সব মিলিয়ে এডভেঞ্চার, সার্ভাইবার জনরার একটা কমপ্লিট প্যাকেজ।।একাকিত্বে, ডিপ্রশনে,খাদ্যের অভাবে ভুগতে থাকা একজন মানুষ কিভাবে এক ফুটবল কে এবং প্রেমিকার রকেটে থাকা ছবিকে সঙ্গী করে চার বছর কিভাবে এক অজানা দ্বিপে আটকিয়ে থাকার সংগ্রাম করেছে সেটা দেখার আমন্ত্রণ রইলো আপনাদের। দেখার পর আপনি টম হ্যাঙ্কস এর ফ্যান হয়ে যাবেন এতোটাই বাস্তবিক অভিনয় ছিলো,আর সেই সাথে একটা ইমোশনাল লাভ স্টুরি এই মুভিটাকে এক উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে।

জনমানব শূন্য স্থান থেকে একা বেঁচে ফেরার সংগ্রাম

ছোটবেলায় রবিনসন ক্রুসোর গল্প আমরা কম-বেশি সবাই পড়েছি। রবিনসন ক্রুসো, অষ্টাদশ শতাব্দীর একজন ব্রিটিশ নাগরিক। যে কিনা ভাগ্যের সন্ধানে পাড়ি দিতে চেয়েছিলো সমুদ্র। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত জাহাজ ঝড়ের কবলে পড়ার কারণে তাকে আটকে যেতে হয় ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের এক দ্বীপে। দীর্ঘ ২৮ বছর সেই দ্বীপে আটকে থাকার পর অবশেষে মুক্তি লাভ করে সে। Cast Away’ মুভিটা যেনো আধুনিক যুগের সেই রবিনসন ক্রুসোরই গল্প। নাম চাক নোলান্ড। FedEx এর একজন সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার। দেশ থেকে দেশে ঘুরে বেড়ান ফেডেক্সের এই টাইম অবসেসড ইঞ্জিনিয়ার। পর্যবেক্ষণ করে বেড়ান ফেডেক্সের কোনো অফিসে টাইম ম্যানেজমেন্টে কোনো ত্রুটি আছে কি-না।

🎬Movie Name: Cast Away
🎭Genre: Drama, Adventure
👾Cast: Tom Hanks,Helen Hunt,Nick Searcy
⛔হালকা স্পয়লার⛔

ক্রিসমাসের ছুটিতে নিজের দেশ আমেরিকার মেম্ফিসে ছুটি কাটাতে আসেন তিনি। প্রিয়তমা কেলির সাথে নিউ ইয়ার্স ইভেই গাঁটছড়া বাধার ইচ্ছা তার। কিন্তু হটাত করে ফেডেক্সের প্রয়োজনে ক্রিসমাসের রাতেই মালয়েশিয়ায় চলে যেতে হয় তাকে। যাওয়ার আগে চাক কেলির কাছে প্রতিজ্ঞা করে যায় যে, খুব দ্রুতই ফিরে আসবে সে। চাকের ভাগ্য খুব বেশি সুপ্রসন্ন ছিলো না। মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে প্রশান্ত মহাসাগরের উপরে ফেডেক্সের প্লেনে হটাত করেই দেখা দেয় যান্ত্রিক গোলযোগ। দেখতে দেখতে প্রশান্ত মহাসাগরের উপর আছড়ে পড়ে চাকদের প্লেন।

চাক নোলান্ড চরিত্রে অভিনয় করেছেন সবার প্রিয় টম হ্যাংকস

ক্রাশ থেকে সার্ভাইভ করতে পারে শুধু চাক। ইনফ্ল্যাটেবল লাইফ র্যাফটের সাহায্যে একটা দ্বীপের উপকূলে পৌঁছায় চাক। পুরো জনশূন্য এক দ্বীপ। হাতের কাছে শুধু ফেডেক্সের কিছু প্যাকেজ। আর কিচ্ছুই নেই। চাক কি পারবে তার প্রেয়সীর কাছে ফিরে যেতে? নাকি সেই দ্বীপে মৃত্যু ঘটবে চাকের? ২০০০ সালের Robert Zemeckis পরিচালিত এপিক সার্ভাইবাল মুভি ‘Cast Away’ এর চাক নোলান্ড চরিত্রে অভিনয় করেছেন সবার প্রিয় টম হ্যাংকস। এই চরিত্রটির জন্য অনেক খাটুনি করেছেন তিনি। আমার মতে ফরেস্ট গাম্পের পর সবচেয়ে সেরা অভিনয় এই মুভিতেই করেছেন টম হ্যাংকস। শুধু তার জন্যই পুরো মুভিটা দেখা যায়!

প্রায় দুই বছর ধরে এই মুভিটির শুটিং হয়েছিলো। চরিত্রে প্রয়োজনে ছয় মাসে ২৫ কেজি ওজন বাড়িয়েছিলেন টম। আবার টমের ওজন ২৫ কেজি কমানোর জন্য, এবং দাড়িগোঁফ আরো বেশি গজানোর জন্য প্রায় এক বছর শুটিং বন্ধ ছিলো। এতো খাটুনির ফসলও পেয়েছেন টম। জিতে নিয়েছিলেন বেস্ট এক্টর এর জন্য ২০০১ সালের গোল্ডেন গ্লোব এওয়ার্ড। ৭৩ তম একাডেমী এওয়ার্ডসে পেয়েছিলেন অস্কার নমিনেশনও। মুভিটির একটি বিশেষত্ব হলো, প্রায় অনেকাংশ জুড়ে মুভিটি ছিলো সংলাপবিহীন।

শুধুমাত্র নিজের এক্সপ্রেশন আর অভিনয় দিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন টম হ্যাংকস। মুভিটির সিনেমাটগ্রাফি আর সাউন্ড মিক্সিংয়ের প্রশংসা করতেই হয়। সাউন্ড মিক্সিং এর জন্য অস্কার নমিনেশনও পেয়েছিলো ‘Cast Away’. সব মিলিয়ে এখনো যারা মুভিটি দেখেননি তাদেরকে শুধু বলবো, “Come on man, it’s freakin’ Tom Hanks!” মুভিটি দেখলে বুঝতে পারবেন টম হ্যাংকস আসলেই কতোটা বড় মাপের অভিনেতা। ফরেস্ট গাম্পের পর দেখতে পারবেন টমের আরো একবার শক্তিশালী অভিনয়।
IMDb Rating: 7.7/10
My Rating: 8.6/10
হ্যাপি ওয়াচিং! 🙂

একজন আশাহীন ভগ্নহৃদয় মানুষের আত্মহত্যার চেষ্টা

অনেক চলচ্চিত্র আছে যা জীবনকে উদযাপন করে, কিন্তু খুব কম চলচ্চিত্র আছে, যেখানে স্বস্তা এবং অতিনাটকীয়তা ছাড়াই হাসি এবং কান্নার মধ্যে নিখুঁত ভারসাম্য রক্ষা করতে সক্ষম হয়। “Castaway on the Moon (2009)” ঠিক তেমনি একটি চলচ্চিত্র। একজন আশাহীন ভগ্নহৃদয় মানুষের আত্মহত্যার চেষ্টা। দুর্ভাগ্যবশত তার বেঁচে যাওয়া। তারপর বন্য প্রকৃতির সংস্পর্শে এসে আবার নতুন করে বেঁচে থাকার ইচ্ছা জাগ্রত হওয়া। এই লোকটির এইভাবে বেঁচে থাকা দুর থেকে অবলোকন করতে থাকা আর এক ব্যক্তির মধ্যে আশার সঞ্চার করে। ধীরে ধীরে সেও তার বন্দীশালা থেকে বেরিয়ে আসে।

যে ব্যক্তি কংক্রিটপূর্ণ আবেগী শহুরে চাকচিক্যের মধ্যে থেকেও আত্মহত্যার চেষ্টা করে, সেই একই ব্যক্তি বন্য প্রকৃতির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ের মধ্যে আনন্দ খুঁজে পায়, উদ্দীপনা খুঁজে পায়, বেঁচে থাকতে চায়। এটা কি ঐ যাণ্ত্রিক শহরের প্রতি ব্যঙ্গ নয়! এই চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে দর্শকদের মধ্যে যে আবেগকে তরান্বিত করা হয়েছে তার মধ্যে কোন ভণ্ডামি নেই। দর্শকদের মাঝে যে আবেগকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করার হয়েছে তা ১০০ শতভাগ নির্ভেজাল। এটাই এই মুভির একটা বিশেষত্ব।

আরও দেখুন>>> 

Mr Kim (Jae-yeong Jeong) এবং Miss Kim (Ryeowon Jung)। বিভিন্ন দিক থেকে তাদের মধ্যে একটি গভীর সংযোগ রয়েছে, উভয়েই তাদের নিজ নিজ আরোপিত বিচ্ছিন্নতার ফাঁদে আটক, আবার উভয়েই তাদের জীবনকে নতুন করে মূল্যায়ন করতে শুরু করেছে, আবার উভয়েই একে অপরের দ্বারা জীবনকে সমাদর করছে। ঋণের বোঝায় আক্রান্ত কিম সেয়ং একদিন ঠিক করে যে সে আত্নহত্যা করবে। এ জীবন সে আর রাখবে না, বাঁচার আশা ফুরিয়ে গিয়েছে। তো যথারীতি একদিন সকালে সে ব্রিজ থেকে নদীতে লাফ দেয় আত্নহত্যা করার জন্য।

জীবনে সুখে থাকার জন্য বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই

কিন্তু ভাগ্যদোষে পানিতে ভেসে সে শহরের কাছেই একটা দ্বীপে উঠে আসে। দ্বীপে আসার পর মরার ভূত তার মাথা থেকে পালিয়ে যায় এবং সে দ্বীপ থেকে বের হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে কিন্তু সব চেষ্টাই বিফলে যায়। তখন সে ওই দ্বীপে টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত হয়। এদিকে দূরবর্তী শহরে বাস করে অদ্ভুত এবং অস্বাভাবিক প্রকৃতির এক মেয়ে কিম জুং। সে সভ্য সমাজে মেলামেশা একদমই করে না। ২৪ ঘন্টাই সে নিজের রুমে কম্পিউটার নিয়ে পড়ে থাকে এবং ক্যামেরা দিয়ে শহরের ছবি তোলে। এভাবেই একদিন ছবি তুলতে গিয়ে সে কিম সেয়ং এর দেখা পায়।

দুজনের মধ্যে তখন এক মজাদার পদ্ধতিতে যোগাযোগ হয়। মানুষ বরাবরি জীবনে সুখী হওয়ার জন্য টাকা, ক্ষমতা ইত্যাদির পেছনে ছোটে। কিন্তু এসবের পেছনে ছোটার ফলে সে ভুলে যায় জীবনের আসল মর্মার্থ। এজন্য একসময় সব অর্জন করা হলেও তখন আর সুখে থাকা যায় না। আসলে জীবনে সুখে থাকার জন্য বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। যেটা দরকার সেটা হলো আশা। আশাই মানুষের সুখে থাকার মূল অস্ত্র। সবকিছু হারিয়ে ফেললেও একটু খানি আশাও মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারে, মানুষকে যেকোন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।

পরিচালক লি হায়-জুন যেনো এমন কিছু কথাই ব্যক্ত করেছেন এ মুভিতে। সাধারণত আমরা এডভেঞ্চার/ সার্ভাইবাল ধরনের মুভিতে কি দেখি? সার্ভাইবাল মুভি অনেক প্রকারেরই হয়। তবে বেশিরভাগ মুভিতে দেখা যায় গল্পের প্রধান চরিত্র কোন দ্বীপে/ জঙ্গলে আটকে যায় এবং সে অনেক সংগ্রাম করে বেশ কিছু দিন/ মাস/ বছর কাটিয়ে দেয় সেখানে এবং অবশেষে সেখান থেকে বেরোতে পারে। এছাড়া আরোও অনেক ভাবেই পরিচালকগণ সার্ভাইবাল মুভি বানিয়ে থাকেন যেটা এখন বলতে চাচ্ছি না। পরিচালক লি হায়-জুং বলতে গেলে এখানে একটা এক্সপেরিমেন্ট করেছেন।

কাস্টাওয়ে অন দ্যা মুন

সার্ভাইবাল মুভিতে পরিচালকগণ রোমান্স জনরাটা সাধারণত ব্যবহার করেন না কিংবা খুব কম ব্যবহার করেন। লি হায়-জুং মুভির শুরু থেকে মাঝ পর্যন্ত গতানুগতিক সার্ভাইবাল কাহিনি দেখালেও পরের অংশে সম্পূর্ণ নিখাদ রোমান্টিক গল্প দেখিয়েছেন যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এ মুভির স্ক্রিনপ্লে তিনি নিজেই লিখেছেন এবং এটির লেখনী খুবই সুন্দর হয়েছে। এডিটিং খুবই শার্প, কোন অপ্রয়োজনীয় মূহুর্ত নেই, কোন সময় গল্প ঝুলে গিয়েছে এমন মনে হয়নি। এছাড়া সংলাপের কাজ অত্যন্ত সুন্দর হয়েছে যা হৃদয়কে স্পর্শ করে।

টেকনিক্যালের দিকের কথা বলতে গেলে কিম বিয়ং-সেও এবং পার্ক সাং-হুং এর করা সিনেমাটোগ্রাফির কাজ অসাধারন হয়েছে। সাথে যেনো বাড়তি মশলা যোগ করেছে চমৎকার কালার গ্রেডিং এবং ক্যামেরার দূর্দান্ত কিছু শট যা চোখের আরাম প্রদানে সফল। এ মুভির মিউজিক যথেষ্ট ভালো হয়েছে যা সার্ভাইবাল এবং রোমান্টিক দুটি মূহুর্ত তৈরিতে ভালো ছাপ ফেলেছে। অভিনয়ের কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসবে “কিম সেয়ং” চরিত্রে রূপদানকারী জুং যেয়-ইয়াং এর কথা। তিনি নিজের চমৎকার অভিনয়শৈলী দিয়ে গোটা মুভিটিকে উপভোগ্য করে তুলেছেন।

“কিম জুং” চরিত্রে রূপদানকারী জুং রেয়-ওন কে যেমন সুন্দর লেগেছে তেমনি সুন্দর লেগেছে তার অভিনয়। এছাড়া এ মুভিতে তেমন বিশেষ চরিত্র আর নেই তবে অন্যান্য সহ অভিনেতারা যারা ছিলেন তাদের অভিনয়ও ভালো হয়েছে। “কাস্টাওয়ে অন দ্যা মুন” এডভেঞ্চার/ সার্ভাইবাল ধরনের আড়ালে দুজন মানুষের ভালোবাসার গল্প, আশার গল্প। মাঝেমধ্যে এমনও হয় ভালোবাসার মানুষটা কাছে থাকলে জীবনে আর কোন কিছুর প্রয়োজন হয় না। তাকে দেখেই মনে বাঁচার আশা জাগে। তার মধ্যেই যেনো রয়েছে জীবনের অন্তর্নিহিত সুখ। যাই হোক, যারা সার্ভাইবাল কিংবা রোমান্টিক মুভি পছন্দ করেন তাদের জন্য এ মুভি মাস্টওয়াচ। মুভিটি দেখার পর একরাশ ভালো অনূভুতি পাবেন। মুভিটির বর্তমান আইএমডিবি রেটিং ৮.১।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *