Last Night in Soho সিনেমার একটি সুন্দর রিভিউ

Edgar Wright পরিচালীত হরর-মিস্ট্রি মুভি Last Night in Soho। এই মুভিটি পার্সোনালি আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে। মুভির কালারফুল ভিজুয়ালস ও স্টাইলিস ডিরেকশন খুবই চমৎকার ও ক্রিয়েটিভ যে কারনে এক মুহুর্তের জন্যও চোখ সরানো যায় না। তাছাড়া খুবই ভিন্ন ধাঁচের একটি রহস্যময় হরর কাহিনী যা আপনার মনোযোগ শক্ত করে ধরে রাখতে সক্ষম সহজেই।

মুভির কাহিনী শুরু হয় Eloise (Thomasin McKenzie) নামের একজন প্রতিভাবান মেয়েকে নিয়ে যার স্বপ্ন লন্ডনে নিজেকে একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার। এই সুবাদেই সে লন্ডনে একটি নামকরা ফ্যাশন ডিজাইনিং ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয় এবং Soho এলাকায় একটি ছোট বাসায় থাকা শুরু করে। সেই বাসায় প্রথম রাতেই ঘুমের মাঝে খুবই রহস্যময় ভাবে সে ১৯৬০ শতকে পৌঁছে যায় ও Sandie (Anya Taylor-Joy) নামের একটি মেয়ের জীবন দেখতে পায়।

এরপর একে একে Eloise-এর সাথে ঘটতে থাকে নানা ভয়াবহ ও টুইস্টেড ঘটনা। কিন্তু কে এই Sandie এবং কি হয়েছে তার সাথে? তা জানতে দেখতে হবে এই ভীষণ এক্সাইটিং মুভিটি। এই মুভির যেই বিষয়টি আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো মুভির কাহিনীটি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুভিটি আমাকে ধরে রেখেছিলো। মনে শুধু নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল এবং উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম যে কখন রহস্য গুলোর উদঘাটন হবে।

মুভিটি মাঝে মাঝে মিস্ট্রি ও মাঝে মাঝে হরর থ্রিলার হয়ে উঠে। এমন অনেক শকিং বিষয় ছিলো যেগুলো একেবারেই সারপ্রাইজিং। কোনো ভাবেই আগে থেকে বুঝা যায় না যে মূল কাহিনী কোন দিকে মোড় নিচ্ছে। তবে একটা বিষয় হলো মুভিটা শেষের দিকে একটু বেশিই ওভার ওয়েলমিং হয়ে উঠে। কিন্তু এটা আমার ব্যাক্তিগত মন্তব্য অনেকের কাছেই শেষের অংশটা ভালো লাগবে বলে আমার ধারনা।

১৯৬০ শতকের লন্ডনের পরিবেশ অসাধারণ ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে

মুভির মেকিংয়ের কথা আর কি বলবো, এতো সুন্দর করে প্রতিটি দৃশ্য সাজানো হয়েছে যে চোখ জুড়িয়ে যায়। কালার গ্রেডিংটা অসম্ভব নজরকাড়া এবং প্রতিটি সিকুয়েন্সে একটা স্বপ্ন স্বপ্ন ভাব নিয়ে আসা হয়েছে যা সত্যিই প্রশংসনীয়। ১৯৬০ শতকের লন্ডনের পরিবেশ অসাধারণ ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। দৃশ্য গুলো দেখার সময়ই সেই ১৯৬০-এর ভাইবটা অনুভব করা যায়। সেই সাথে কস্টিউম ও সাউন্ডের কাজ ছিল চমৎকার। ভয়ের মুহূর্ত গুলোয় গাঁ শিউরে উঠে বেশ কিছু সময়।

রহস্য ও টেনশনের মিশ্রনে খুবই ইন্টারেস্টিং ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে কাহিনীটি। এরপর চলে আসি অভিনয় সম্পর্কে। মূল চরিত্র Eloise হিসেবে আউটস্ট্যান্ডিং অভিনয় করেছেন Thomasin McKenzie। তাকে এই চরিত্রে খুবই মানিয়েছে এবং তার সাথে কাস্টে বাকি সবার কেমিস্ট্রি ভালো করে জমেছে। বিশেষ করে Sandie চরিত্রে Anya Taylor-Joy-এর প্রতি তার সিমপ্যাথি এবং কেয়ারিং বিষয় গুলো খুবই ভালো লেগেছে।

Anya Taylor-Joy-এর অভিনয় সব সময়ের মতোই এক্সিলেন্ট ছিলো। Sandie চরিত্রটা অনেক ক্যারিসম্যাটিক ও ড্যাজলিং। এমন গ্লামারাস রোলে তাকে চরম ভালো লেগেছে। তাছাড়া মুভিতে আছেন সাপোর্টিং চরিত্রে Matt Smith। আমার Matt Smith-কে যেকোনো রোলে ভালো লাগে। এবং এই মুভিতেও তাকে তার চরিত্রে মানানসই লেগেছে। অন্যান্য সাইড চরিত্র গুলোয় সবার অভিনয় ভালো লেগেছে।

সব মিলিয়ে আমার মনে হয়েছে এই মুভিটি এই বছরের সেরা মুভি গুলোর একটি। ইতোমধ্যেই মুভিটি আমার বেশ প্রিয় হয়ে উঠেছে। ভিন্ন ধাঁচের স্টাইলিশ একটি মিস্ট্রি হরর মুভি দেখতে চাইলে আমি সকলকেই একবার হলেও এই মুভিটি দেখতে রিকমেন্ড করছি। মুভিতে বেশ ডিপ্রেসিং কিছু থিম আছে এবং অ্যাডাল্ট কনটেন্ট আছে। মুভিটি যে কোনো টরেন্ট সাইটে পেয়ে যাবেন সহজেই। আশা করছি আপনাদের এই মুভিটি দেখে সময় ভালো কাটবে।

আমিত্বের সন্ধানে যেয়ে প্রতি রাতেই সম্মুখীন হচ্ছেন নতুন অভিজ্ঞতার

নতুন শহরে নতুন বাসায় প্রথম রাতেই ঘুম ভেঙে বাসার পোশাকেই নিজেকে আবিষ্কার করলেন কোন ‘বার’ এ। আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে চিনতে পারছেন না আপনি। অন‍্য চেহারা অন‍্য এক মানুষ আপনি। এ যেন আমার ভেতরে নতুন আমি। সেই আমিত্বের সন্ধানে যেয়ে প্রতি রাতেই সম্মুখীন হচ্ছেন নতুন অভিজ্ঞতার। কিন্তু আপনি নিজেই জানেন না এর পরিনতি কতটা ভয়ংকর!

ভাবছেন অল্টার ইগো কিংবা স্লিপ ওয়াকিং! যা খুশি ভাবুন! শেষে কিন্তু দারুণ এক চমক অপেক্ষা করছে আপনার জন‍্য। শুরু থেকেই মুভিটা হুক করে ফেলেছিল। ছোট্ট শহরতলী থেকে লন্ডনে আসে এলি; স্বপ্ন দেখে বড় ফ‍্যাশন ডিজাইনার হওয়ার। কিন্তু প্রথম দিনেই বুঝে যায় এ শহর ঠিক তার জন‍্য নয়। তবু টিকে থাকার জন‍্য নিরন্তর স্ট্রাগল করে যায় সে। এরই মধ‍্যে নতুন বাসায় প্রতি রাতে তার সাথে ঘটতে থাকে অদ্ভুত সব ঘটনা।

প্রতি রাতে এলি অতীতে চলে যাচ্ছে অন‍্য একজন হয়ে! রোমান পোলানস্কির ‘রিপালশন’ এর ভাইব পাবেন আপনি এতে। নিয়ন আলোয় লাল-নীল বাতি জ্বালানো ‘সোহো’ দেখতে ভালোই লাগবে। সিক্সটিজের ড্রেসআপ সাথে পুরোনো সব গান আপনাকে ভিন্টেজ একটা ফিল দেবে।
ডিরেক্টর Edgar Wright নিজেই লিখেছেন গল্পটা। আর তাতে বাড়তি মাসালা দিতে উপস্থিত হয়েছেন সম্ভাবনাময় অভিনেত্রী Anya Taylor Joy.

অসম্ভব সুন্দর গ্রেসফুল লেগেছে তাকে। তার সাথে তালে তাল মিলিয়ে এগিয়েছেন Thomasin McKenzie. ভিন্টেজ কস্টিউম ডিজাইনে অসাধারন সব স্কোর; সিক্সটিজে নিয়ে যাবে আপনাকে। কিন্তু এ মুভির চোখের শান্তি হল এর সিনেমাটোগ্রাফি। যেন কালার নিয়ে খেলা করেছেন স্ক্রিনে। সোহো শহর আপনার অনেক জীবন্ত মনে হবে একারনে। হরর হিসেবে একে দেখতে বসলে ঘাবড়ে যাবেন আপনি। বরং একে আপনি সাইকোলজিক‍্যাল মিস্ট্রি ড্রামা হিসেবে দেখুন। বাড়াবাড়ি রকমের ভালো না হলেও; পুরোনো সেটিং এ মুভি দেখায় আগ্রহ থাকলে এ মুভি একবার দেখে নিতে পারেন।

  • Last Night in Soho 2021
  • Psychological horror film
  • Directed by Edgar Wright

বাঙালি ছেলেমেয়েদের ছোট থেকেই সিনেমার চোখ তৈরি হয়

পরিচালক যখন নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে চান, আর দর্শক যখন সেটা পুরোপুরি বুঝতে পারেন, তখন হয় রাজযোটক। Last Night In Soho এর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। আমরা বাঙালি ছেলেমেয়েদের ছোট থেকেই সিনেমার চোখ তৈরি হয় সত্যজিৎ রায় দেখে। একটু বড়ো হলে ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, তপন সিনহা, গৌতম ঘোষ, আরো অনেকে। সম্ভবতঃ সেই কারণেই আমরা মজ্জাগত সিনেমা প্রেমী, এবং ভালো সিনেমা আমাদের আজীবন আকর্ষণ করে।

আরোও দেখুন>>> 

আর দশটা হরর সাইকোলজিকাল থ্রিলার এর থেকে একদম আলাদা এই সিনেমাটি, সুনিপুণ এডিটিং এর কারনে দেখতেও দুর্দান্ত লাগে। বেশ কিছু জাম্প স্কেয়ার রয়েছে, কিন্তু তার বাড়াবাড়ি নেই। কিছু কিছু অসাধারণ শট পরিচালকের নিপুণতা দর্শায়। ভি এফ এক্স যথাযথ, যতটুকু দরকার ততটুকুই। ষাটের দশকের লন্ডনের রাস্তার সিনেমাটোগ্ৰাফিও সুন্দর। এবং সর্বোপরি অসম্ভব আনপ্রেডিক্টেবল ক্লাইম্যাক্স। সিনেমা শেষ হবার 15 মিনিট আগেও দুর্দান্ত মোচড় আছে চিত্রনাট্যে।

অভিনয়ে সবাইই ভীষণ ভালো। Thomasin McKenzie কে Jojo Rabbit এর পর এখানে দেখে ভালো লাগলো। গেম অফ থ্রোনস এর Dianna Rigg এর এটি শেষ ছবি। Anya Taylor Joy এর ব্যাপারে কি আর বলবো। দুর্দান্ত অভিনেত্রী। কিন্তু টাইপ কাস্ট না হলেই ভালো। আর Matt Smith ও দারুন করেছেন।

দু একটি জায়গায় একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি একঘেয়ে লাগে

কিন্তু এই সিনেমার কিছু খামতিও আছে। Baby Driver এর থেকেই লক্ষ্য করা যায় পরিচালক এডগার রাইটের চিত্রনাট্য সিনেমার থার্ড অ্যাক্ট এ গিয়ে শ্লথ হয়ে যায়, এই সিনেমাটার ক্ষেত্রেও তাইই হয়েছে, দু একটি জায়গায় একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি একঘেয়ে লাগে। ম্যাট স্মিথ এর মত অভিনেতার সিনেমার দ্বিতীয়ার্ধে রাতের লন্ডনের রাস্তায় স্রেফ চিৎকার করতে করতে হেঁটে আসা ছাড়া আর কিছু করার ছিলনা।

দু ঘণ্টার এই সিনেমা থেকে অন্তত মিনিট পনেরো ছেঁটে দিলে চিত্রনাট্য আরো মেদহীন হতো। যারা হরর এর নামে বিকট মেক আপ করা ভূতের মুখ আর ক্ষণে ক্ষণে অপ্রয়োজনীয় জাম্প স্কেয়ার বোঝেন, এই সিনেমা তাদের জন্য নয়। হরর সাইকোলজি জঁর এ সিনেমাটি একটি রত্ন হয়ে রইলো। হলে খুব বেশিদিন চলেনি।

এরকম একটা সিনেমার ওটিটি তে মুক্তির কোনও খবর নেই। তবুও বলবো ওটিটি তে এলেই কিছু খরচ করেই দেখুন। নইলে এত ভালো সিনেমার ব্যবসায়িক দিকটা মার খেলে যখন এরকম সিনেমা হওয়া কমে যাবে, তখন আপনারাই অভিযোগ করবেন কেন এ শুধু মাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজির ছবিই এখন বেশি চলে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *