Avatar মুভিতে গল্পের চেয়ে ভিজুয়াল এক্সপেক্টেশান বেশি

যেহেতু Avatar মুভিতে গল্পের চেয়ে ভিজুয়াল এক্সপেক্টেশান বেশি জরুরী সে বিষয়েই আগে বলি চোখের শান্তি এক্কেবারে চোখের মেডিটেশন হয়েছে মুভিটা দেখে। এক কথায় অনবদ্য চিত্রপট। কোন ধ্রুপদী চিত্রশিল্প নয়, আধুনিক কালের তুলিতে আঁকা ভবিষ্যতের চিরায়ত রূপ রস গন্ধ মাখা ক্যানভাস রচিত হয়েছে Avatar 2: Way of Water মুভিতে।

যেহেতু বাংলাদেশে মুক্তির ৪র্থ দিনে গিয়ে আমি দেখলাম, সেহেতু একদিনে প্রিমিয়ার দর্শক ও হল প্রিন্ট রিভিউয়ার- দু জাতেরই প্রতিক্রিয়া পড়েছি। প্রায় সবাই ভিজুয়ালি সুখকর ট্রিটমেন্টের ভরসা দিলেও স্ক্রিন প্লে ও স্টোরি আর্ক নিয়ে নেতিবাচক কথা বলেছেন। আজ মুভিটা দেখার পর তারা কেন এমন রিয়েকশান দিয়েছেন তা বেশ বুঝতে পেরেছি। এবং চেষ্টা করছি তাদের যুক্তি খন্ডন করার।

২০১৯ সালে পড়াশোনার পাট চুকিয়েছি। আজ #নন_স্পয়লার এক্সপ্লেনেশান করার জন্য চোখ বুজে সেকেন্ড ইয়ারের পাঠ্যসূচী মনে করতে হচ্ছে।
সাহিত্যের অলঙ্কারিকগণের মতে একটি সার্থক নাটকে ৫টি অংক থাকবে। এবং অংক ৫টিতে ঘটনা বিন্যাসের ৫টি বিশেষ পর্যায় সংস্থাপিত হবে। এই ৫টি পর্যায় হল
১) প্রারম্ভ,
২) প্রবাহ,
৩) উৎকর্ষ,
৪) গ্রন্থিমোচন এবং
৫) উপসংহার।

২০০৯ সালে Avatar মুভির মাধ্যমে জেমস ক্যামেরনের Pandora World এর ‘প্রারম্ভ’ হয়েছিলো। ২০২২ এর ১৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া Avatar 2 Way of Water মাত্রই Pandora ‘প্রবাহ’ শুরু করলো। অর্থাৎ World Building. প্যান্ডোরা গ্রহটাতে জঙ্গলের বাইরে আর কি কি আছে, কারা কারা আছে তা দেখানো হল। জ্যাক সালির পরিবারের আকার বোঝানো হল। আমরা পুরো Avatar Cinematic Universe এ আসলে কোন কোন চরিত্রগুলোর সাথে এটাচ হব তা দেখানো হল। ‘EYWA’ সত্ত্বাটা আসলে কি, কেমন পাওয়ার, তার কিছু ইঙ্গিত দেয়া হল।

২০২৪ সালে মুক্তি প্রতীক্ষ Avatar 3 : The Seed Bearer এ ঘটবে ‘উৎকর্ষ’. যারা নতুন মুভিটি দেখেছেন তারা নিশ্চয় বুঝেছেন কে এই বীজ ধারনকারী? তাকে ঘিরেই হবে পরের মুভিটা। স্পয়লার দিচ্ছি না।

Avatar Universe এর ২য় কিস্তি গল্প অসম্পূর্ণ রেখে শেষ হয়েছে

২০২৬ সালে আসবে Avatar 4: The Tulkun Rider. এই মুভিতে হবে ‘গ্রণ্থিমোচন’. টুলকুন রাইডার কে তাও আমরা নতুন মুভিটিতে পেয়ে গেছি। সম্ভবত এ পর্বে আমরা জ্যাক সালির ক্যারাক্টার আর্ক শেষ হতে দেখবো

Avatar 5 : The Quest for Eywa তে হবে উপসংহার। জেমস ক্যামেরন তাঁর মহাকাব্য শেষ করবেন। এবং প্যান্ডোরার এ জগতটিকে নিয়ে Disney হয়তো বা স্পিন অফ কিংবা রিবুট শুরু করবে।

MCU ‘র ৪র্থ ফেইজের মত না হলেও অনেকটা এপিসোডিক সিরিজের মতই Avatar Universe এর ২য় কিস্তি গল্প অসম্পূর্ণ রেখে শেষ হয়েছে। আমার মত অনেক দর্শকই ‘Way of Water এর যাত্রা শুরুর গল্পটা অসম্পূর্ণ রেখে জ্যাক সালির পার্সোনাল রিভেঞ্জটা অন্তত শেষ করতে পারতো’ এমন মন্তব্য করেছেন। তবে ‘কর্ণেল মাইলস কোয়ারিচ’কে সম্ভবত রাবণ বা দুর্যোধনের মত মহাকাব্যিক ভিলেন বানানোর পরিকল্পনা ক্যামেরনের।

আরোও দেখুন>>> 

পরিশেষে বলি Avatar ১ম মুভিটা যেমন টেকনিক্যালি মাস্টারক্লাসের বিষয় ছিল নতুন কিস্তিটিও যুগ যুগ ধরে পানিতে দৃশ্যধারণ বিষয়ে ক্লাস করাবে আগামি নির্মাতাদের। যাদের সুযোগ আছে তারা তো দেখবেনই; যাদের বড় পর্দায় দেখার সুযোগ নেই বলে মনে হচ্ছে আপাতত- তারাও কোন না কোন ভাবে বাবা, মা, বড় ভাই বোন, বন্ধু বান্ধবদের কনভিন্স করে নিয়ে আসুন বড় পর্দায়। চেষ্টা করবেন 3D তেই দেখতে। আর অন্তত মাসখানেক কেউ কিছুর স্পয়লার দিয়েন না। পিলিজ লাগে

১১ বছরের প্রচেষ্টায় নির্মিত সিনেমা অ্যাভাটার – দ্য ওয়ে অফ ওয়াটার

২০২২ সালে রিলিজ হওয়া ইংরেজি ভাষার সাইন্স ফিকশন/অ্যাকশন জনরার আমেরিকান সিনেমা ‘অ্যাভাটার – দ্য ওয়ে অফ ওয়াটার’। সিনেমাটি নির্মাণ করেছে আমাদের সবার প্রিয় লিজেন্ডারি নির্মাতা জেমস ক্যামেরন। আনুমানিক ৩৫০-৪৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেটে এবং ১১ বছরের প্রচেষ্টায় নির্মিত সিনেমা ‘অ্যাভাটার- দ্য ওয়ে অফ ওয়াটার’। সিনেমার সবচেয়ে বড় পজেটিভ দিক এর ভিজ্যুয়াল।

এত অনবদ্য মেকিং কি বলবো! প্রত্যেকটা দৃশ্য যেন চোখের শান্তি। ভিজ্যুয়ালি স্টানিং ; বিশেষ করে যারা সিনেপ্লেক্সে 3D তে দেখেছে তারা তো দারুণ এক্সপেরিয়েন্স নিতে পেরেছে এই সিনেমার ভিজ্যুয়ালের। দেখে বোঝাই যাচ্ছিলো যে এই সিনেমার জন্য কতটা পরিশ্রম করেছেন জেমস ক্যামেরন।
সিনেমার পানির নিচের দৃশ্যগুলো দারুণ ছিলো। খুব নিখুঁতভাবে আন্ডারওয়াটার দৃশ্যগুলো শ্যুট করা হয়েছে।

খুব নিখুঁতভাবে আন্ডারওয়াটার দৃশ্যগুলো শ্যুট করা হয়েছে

আন্ডারওয়াটার দুনিয়াটা এত দারুণভাবে পোট্রে করেছে, জোস। সিনেমায় যে খরচ করা হয়েছে এবং ১১ বছর এই সিনেমার জন্য পরিশ্রম করেছে নির্মাতা ; সেটা সত্যি বলতে দেখা যাচ্ছিলো সিনেমায়। সিনেমা বানাতে এত পরিশ্রম, টাকা এবং সময় হইতো জেমস ক্যামেরন ছাড়া আর কারো পক্ষে দেওয়া সম্ভব না। সিনেমায় স্পাইডার বলে একটা ক্যারেক্টার আছে সেই ক্যারেক্টারটা আমার সবচেয়ে বেশী ভালো লেগেছে।

এই স্পাইডার এলিয়েনদের সাথে থাকলেও সে কিন্তু মানুষ। এই ছেলের ব্যাক স্টোরিও আছে যেটা বললে স্পয়লার হবে তাই সিনেমা দেখলেই বুঝবেন। সিনেমার নেগেটিভ দিকগুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে, অনেক বেশী ক্যারেক্টার। খুব বেশী ক্যারেক্টার দেখানো হয়েছে ; আমিতো কিছু কিছু যায়গায় কনফিউজড হয়ে যাচ্ছিলাম।

সিনেমায় ভিলেন থাকলেও সেটা যে খুব বেশী ইমপ্যাক্ট ফেলেছে তেমন না। ভিলেনের ক্যারেক্টারটা আরও ভালোভাবে বিল্ডআপ করা যেতো।
যায়হোক- ভিজ্যুয়াল, গ্রাফিক্স এবং দুর্দান্ত অ্যাকশন দেখার জন্য এই সিনেমা বেস্ট একটা অপশন। গল্পের দিকে প্রথমটা থেকে দূর্বল হলেও ভিজ্যুয়ালের দিকে এই পার্টটা আগানো।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *